Facebook নাকি God’s Book


 

শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু

4929114706_0002c91964

 

আমাদের অনেকেরই ফেসবুক আসক্তি রয়েছে। এক অজানা অন্ধ তাড়নায় দিনে কয়েকবারও ফেসবুকের অ্যাকাউন্ট চেক করি। কখনও কখনও ঘুমানোর আগে এটাই আমাদের শেষ কাজ হয়, আবার ঘুম থেকে উঠে প্রথম কাজ হয়। যখন আমরা এটা নিয়ে ব্যস্ত থাকি সময় দ্রুত চলে যায়, অনেকটা যেন আমরা আচ্ছন্ন থাকি এটা নিয়ে।

অথচ আমাদের কয়জনের এমন আসক্তির সম্পর্ক, অথবা আদৌ কোন সম্পর্ক আছে – কুরআনের সাথে? এটা সেই বই বা কিতাব যেটা মদ্যপ, অত্যাচারী, কন্যা শিশু জীবন্ত চাপা দিয়ে হত্যাকারী মানুষদেরকে ন্যায় এর পথে আহ্বানকারী, অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী, কোমল হৃদয়ের, সমস্ত জগতের রব আল্লাহর নিরহঙ্কারী বান্দায় পরিনত করে দিয়েছিল। এই কিতাবের মধ্যে যা রয়েছে তা যদি সেই মানুষগুলোর হৃদয়ে চিরন্তন শান্তি আর প্রবৃত্তির খেয়ালখুশির শৃঙ্খলা থেকে আত্মার মুক্তি এনে দিতে পারে, তাহলে নিঃসন্দেহে তা আমাদেরকেও আমাদের সমস্যা, হৃদয়ের যন্ত্রণা আর দুশ্চিন্তা থেকে উদ্ধার করতে পারে। কিন্তু, আমাদেরকে প্রভাবিত করার যে কি ভীষণ ক্ষমতা এর রয়েছে তা সারাজীবন আমাদের অজানাই থেকে যাবে যদি আমরা এই কিতাবকে বাদ দিয়ে অন্যান্য সম্পর্কগুলোকে কে প্রাধান্য দেওয়া অব্যহত রাখতে থাকি।

আমারা কেউ কেউ কুরআনের সাথে সম্পর্ক গড়তে চাই, কিন্তু হয়তো মনে হয়…একঘেয়ে, দুর্বোধ্য, অথাবা যথেষ্ট দ্রুত না। আমরা স্ট্যাটাস আপডেট, ছবি, আর প্রানবন্ত আলাপচারিতায় অভ্যস্ত। আমরা মজার মজার ক্যাপশন আর ছবি বেশী উপভোগ করি। আমরা সত্যিকারেরে মানুষজন, কথার আদান প্রদান, ধরা ছোঁওয়ার মধ্যের বন্ধুত্ব -অথবা অন্ততঃ শুধু ফেসবুকের বন্ধুত্ব বেশী পছন্দ করি। আমাদের মধ্যে অনেকেই বাস্তবে চেনেও না এমন মানুষকেও বন্ধু হিসেবে অ্যাড করে নেই।

আসলে আমরা যা পছন্দ করি তা অনেক আগে থেকেই কুরআনের ভিতরেই রয়েছে। এখন এটা আমাদের উপরই নির্ভর করে আমরা আল্লাহর সহায়তায় কুরআনকে আমাদের বর্তমানের বিনদোনের উপকরনের সাথে অদল বদল করতে পারি কিনা। কুরআনের ভিতর থেকেই আমরা আমাদের হৃদয়ের খোরাক পেতে পারি, যদি আমরা আমাদের চিন্তাধারাকে পরিবর্তন করি আর আমাদের কল্পনাশক্তিকে কাজে লাগাই। এখন কয়েকটি উপায়ের উল্লেখ করছি যা আমরা আল্লাহর কিতাব আল-কুরানের সাথে আমাদের সম্পর্ক উন্নয়নে বাস্তবে কাজে লাগাতে পারি আর এতে করে দুনিয়া ও আখেরাতে আমাদের অবস্থানের উন্নতির আশা করতে পারি ইনশাআল্লহ।

Continue reading

ইমাম বুখারী (রহ.) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী


শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু

155

সংকলনঃ আব্দুল্লাহ বিন শাহেদ আল-মাদানী   |   ওয়েব সম্পাদনাঃ মোঃ মাহমুদ -ই- গাফফার

ভূমিকা:

ইমাম বুখারী। কাল প্রবাহে একটি বিস্ময়ের নাম। স্মৃতির প্রখরতা, জ্ঞানের গভীরতা, চিন্তার বিশালতা, চারিত্রিক দৃঢ়তা, অটুট সততা আর বিশাল পর্বত সম হিম্মতের এক মূর্ত প্রতীক এই মহাপুরুষ। তিনি ইলমে হাদীসের এক বিজয়ী সম্রাট। তার সংকলিত হাদীসের মহামূল্যবান সংকলন সহীহুল বুখারী বিশুদ্ধতার ক্ষেত্রে আল্লাহর কিতাব মহা গ্রন্থ আল কুরআনের পরেই যার অবস্থান। কিয়ামত পর্যন্ত সমগ্র মুসলিম উম্মাহ তার সাধনার কাছে ঋণী। আসুন, খুব সংক্ষেপে আমরা এই মনিষীকে জানার চেষ্টা করি।

নামজন্ম ও বংশ পরিচয়ঃ

তিনি হচ্ছেন সমকালীন মুহাদ্দিছদের ইমাম হাফেয আবু আব্দুল্লাহ্ মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল বিন ইবরাহীম বিন মুগীরা বিন বারদিযবাহ আলজু’ফী। তাঁকে আমীরুল মুমিনীন ফীল হাদীছও বলা হয়। ১৯৪ হিঃ সালের ১৩ই শাওয়াল জুমআর রাত্রিতে তিনি বুখারায় জন্ম গ্রহণ করেন।

শৈশব কাল ও জ্ঞান অর্জনঃ

শিশুকালেই তাঁর পিতা ইন্তেকাল করেন। পিতার মৃত্যুর পর মাতার তত্বাবধানে তিনি প্রতিপালিত হন। দশ বছর বয়সে উপনীত হয়ে তিনি জ্ঞান চর্চার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেন। অল্প বয়সেই তিনি পবিত্র কুরআন মুখস্ত করেন। শৈশব কালে মক্তবে লেখাপড়া করার সময়ই আল্লাহ্ তাঁর অন্তরে হাদীছ মুখস্ত ও তা সংরক্ষণ করার প্রতি আগ্রহ ও ভালবাসা সৃষ্টি করে দেন। ১৬ বছর বয়সেই হাদীছের প্রসিদ্ধ কিতাবগুলো পাঠ সমাপ্ত করেন। তাঁর জীবনীতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তিনি ছোট থাকতেই অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। এতে তাঁর মাতা আল্লাহর কাছে খুব ক্রন্দন করলেন এবং স্বীয় সন্তানের দৃষ্টি শক্তি ফেরত দেয়ার জন্য তাঁর কাছে অবিরাম দুআ করে যাচ্ছিলেন।

হঠাৎ এক দিন তাঁর মা স্বপ্নে দেখলেন যে আল্লাহর নবী ইবরাহীম (আঃ) তাঁকে লক্ষ্য করে বলছেনঃ ওহে! তোমার সন্তানের দৃষ্টি শক্তি ফেরত চেয়ে আল্লাহর দরবারে তোমার ক্রন্দনের কারণে তিনি তোমার সন্তানের দৃষ্টি শক্তি ফিরিয়ে দিয়েছেন। তখন তিনি প্রকৃত ঘটনা যাচাই করার জন্য স্বীয় সন্তানের কাছে গিয়ে দেখেন সত্যিই তাঁর সন্তান সম্পূর্ণ দৃষ্টি শক্তি ফেরত পেয়েছে।

Continue reading

শায়খ আলবানী (রহ:)-এর বৈচিত্র্যময় জীবনের কিছু স্মৃতি


শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু

scrolls-442x251

সংকলনে : আহমাদ আব্দুল্লাহ নাজীব

পিতার সাথে বিরোধ

শায়খ আলবানী কট্টর হানাফী পরিবেশে বেড়ে উঠেছিলেন। তাঁর পিতা ছিলেন আলবেনীয় ও সার্বীয় আলেমদের মধ্যে হানাফী ফিকহ সম্পর্কে সবচেয়ে বিজ্ঞ এবং নির্ভরযোগ্য আলেম। তাঁর নিকটে সবাই ফৎওয়া নিতে আসত। কিন্তু শায়খ আলবানী শুরু থেকেই ছিলেন ভিন্ন মানসিকতার। বিশেষতঃ কুরআন-হাদীছের গভীরভাবে অধ্যয়ন করার পর তাঁর নিকটে সমকালীন বিভ্রান্তি ও ভুল-ত্রুটিসমূহ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। খুঁজে পান কুরআন-হাদীছের সাথে বহু মাসআলা-মাসায়েলের যোজন যোজন দূরের ব্যবধান। বিভিন্ন মসজিদে তখন হানাফী এবং শাফেঈদের দু’টি করে জামা‘আত হ’ত। হানাফী জামা‘আতের পর শাফেঈদের জামা‘আত হ’ত। কিন্তু সময়ের আবর্তনে সিরিয়ায় একজন শাফেঈ শাসক ক্ষমতাসীন হন এবং তিনি হানাফীদের পূর্বে শাফেঈদের ছালাত আদায় করার নির্দেশ জারী করেন। এমতাবস্থায় শায়খ আলবানী দ্বিতীয় জামা‘আতে ছালাত আদায়ের কোন দলীল না পেয়ে শাফেঈদের সাথে আউয়াল ওয়াক্তে ছালাত আদায় করা শুরু করলেন। একদিন হানাফীদের ইমাম শায়খ বুরহানী হজ্জের সফরে গমনের কারণে শায়খ আলবানীর পিতাকে ইমামতির দায়িত্ব দিয়ে গেলেন। পরিস্থিতি এমন হ’ল যে, শায়খ আলবানী প্রথম জামা‘আতে ছালাত আদায় করছেন, আর তাঁর পিতা দ্বিতীয় জামা‘আতে ইমামতি করছেন। পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে পড়ল, যেদিন তাঁর পিতা তার ব্যক্তিগত সফরে যাওয়ার কারণে উপলক্ষে আলবানীকে দ্বিতীয় জামা‘আতে ইমামতি করার নির্দেশ দিলেন। স্পষ্টভাষী আলবানী স্বীয় পিতাকে বললেন, এ বিষয়ে আপনি আমার মতামত জানেন যে, আমি প্রথম জামা‘আতে ছালাত আদায় করি। এমতাবস্থায় স্বীয় মত বিরোধী কাজ করা আমার জন্য খুবই কঠিন। স্বাভাবিকভাবেই বিরোধ তীব্রতর হ’ল। অতঃপর একদিন পিতা তাকে গৃহকোণে ডেকে বললেন, তাহ’লে এটাই কি সত্য যে, তুমি তোমার মাযহাব পরিত্যাগ করেছ? ক্রোধান্বিত পিতার কণ্ঠ ঊঁচু হ’তে লাগল। একপর্যায়ে বললেন, হয় তোমাকে একমত হ’তে হবে, অন্যথায় পৃথক হ’তে হবে। শায়খ আলবানী পিতার নিকট থেকে তিনদিন সময় চেয়ে নিলেন। অবশেষে মাত্র ২৫ সিরীয় লিরা হাতে নিয়ে পিতৃগৃহ থেকে বিদায় নিলেন পরবর্তীকালের বিশ্ববিশ্রুত এই মুহাদ্দিছ। তখন তাঁর বয়স সবেমাত্র কুড়ি অতিক্রম করেছিল। সেই বয়সেই তিনি الروض النضير في ترتيب وتخريج معجم الطبراني الصغير নামক একটি তাখরীজ গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। যদিও তা অদ্যাবধি প্রকাশিত হয়নি (ছালেহ আল-মুনাজ্জিদ, আহদাছুন মুছীরাহ মিন হায়াতিল ইমাম আলবানী)।

Continue reading

সমস্ত মুসলমানদেরকে যদি হত্যা করা হয়, তবুও বিজয় ইসলামেরই হবে


শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু

সংকলন ও সম্পাদনাঃ  شادمان سكب

8504655484_efc8d2c5d6

ঈমানদার যুবক ও আছহাবুল উখদূদের কাহিনী

হযরত সুহায়েব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে জে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ বহুকাল পূর্বে একজন রাজা ছিলেন। সেই রাজার ছিল একজন যাদুকর। ঐ যাদুকর বৃদ্ধ হ’লে একদিন সে রাজাকে বলল, ‘আমি তো বৃদ্ধ হয়ে গেছি এবং আমার মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এসেছে। সুতরাং আমার নিকট একটি ছেলে পাঠান, যাকে আমি ভালভাবে যাদুবিদ্যা শিক্ষা দিব’। বাদশাহ তার নিকট একটি বালককে পাঠিয়ে দিলেন। তিনি তাকে যাদুবিদ্যা শিক্ষা দিতে লাগলেন। বালকটি যাদুকরের নিকট যে পথ দিয়ে যাতায়াত করত, সে পথে ছিল এক সন্ন্যাসীর আস্তানা। সন্ন্যাসী ঐখানে বসে কখনো ইবাদাত করতেন, আবার কখনো লোকদের নিকট ওয়াজ-নসিহাত করতেন।  বালকটিও পথের পাসে দাঁড়িয়ে তার ওয়াজ নসীহত শুনত।  ফলে যাদুকরের নিকট পৌছাতে বালকটির দেরী হ’ত বলে যাদুকর তাকে প্রহার করত। বালকটি সন্ন্যাসীর নিকট এ কথা জানালে তিনি বালককে শিখিয়ে দেন যে, তুমি যদি যাদুকর কে ভয় কর তাহ’লে বলবে, বাড়ীর লোকজন আমাকে পাঠাতে বিলম্ব করেছে এবং বাড়ীর লোকজনকে ভয় পেলে বলবে, যাদুকরই আমাকে ছুটি দিতে বিলম্ব করেছে।

বালকটি এভাবে একদিকে যাদু বিদ্যা অন্যদিকে ধর্মীয় বিদ্যা শিক্ষা  করতে লাগলো। একদিন পথে সে দেখল, একটি বৃহদাকার প্রাণী মানুষের চলাচলের পথ রোধ করে বসে আছে। বালকটি ভাবল, আজ পরীক্ষা করে দেখব যে আল্লাহর কাছে যাদুকরের ধর্ম শ্রেষ্ঠ, না সন্ন্যাসীর ধর্ম শ্রেষ্ঠ ? অতঃপর সে একটি পাথর নিয়ে বলল, ‘হে আল্লাহ্‌! যাদুকরের কার্যকলাপ অপেক্ষা সন্ন্যাসীর কার্যকলাপ যদি তোমার নিকট অধিকতর প্রিয় হয়, তবে এই প্রাণীটিকে এই পাথরের আঘাতে মেরে ফেল। যেন লোকজন যাতায়াত করতে পারে’। এই বলে প্রাণীটিকে লক্ষ্য করে সে পাথরটি ছুঁড়ে মারল এবং প্রাণীটি মারা গেল ও লোক চলাচল শুরু হ’ল। এরপর বালকটি সন্ন্যাসীর নিকট গিয়ে তাকে ঘটনাটি জানালে তিনি তাকে বললেন, ‘বৎস! তুমি এখনই আমার চেয়ে শ্রেষ্ঠ হয়ে উঠেছ। তোমার প্রকৃত স্বরূপ আমি বুঝতে পারছি। শীঘ্রই তোমাকে পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে। যদি তুমি পরীক্ষার সম্মুখীন হও তাহ’লে যেন আমার কথা প্রকাশ করে দিও না’।

Continue reading

মুখে সশব্দে নিয়ত পড়া প্রসঙ্গ


শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু

লেখক: আব্দুর রাকীব (মাদানী)  | ওয়েব সম্পাদনাঃ মোঃ মাহমুদগাফফার

5516724285_9a6ff436b8

নিয়তের অর্থঃ

নিয়ত আরবী শব্দ। এর বাংলা অর্থঃ ইচ্ছা করা, মনস্ত করা, এরাদা করা, সংকল্প করা। (মুনজিদ, ৮৪৯/ ফতহুল বারী, ১/১৭)

শব্দটি আমরা বাংলাভাষী লোকেরাও ব্যবহার করে থাকি। যেমন আমরা বলি: আমি এ বছর হজ্জ করার নিয়ত করেছি। অর্থাৎ ইচ্ছা করেছি মনস্থ করেছি।

 

নিয়তের গুরুত্বঃ

শরীয়তে নিয়তের গুরুত্ব অপরিসীম। ব্যক্তির আমল আল্লাহর নিকট গ্রহণীয় হয়না যতক্ষণে বান্দা তার নিয়ত সঠিক না করে নেয়। অর্থাৎ , আল্লাহর জন্যে তাঁর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে না করে নেয়। আল্লাহ বলেনঃ

(তাদেরকে এছাড়া কোন নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ট ভাবে আল্লাহর এবাদত করবে…)। (সূরা বাইয়্যিনাহ/৫)

Continue reading

ঈদের বিধিবিধান


শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু

url

ভূমিকা: অবারিত আনন্দের বার্তা নিয়ে যখন ঈদের এক ফাঁলি চাঁদ পশ্চিম দিগন্তে ভেসে উঠে তখন সর্বস্তরের মানুষের হৃদয়ে বয়ে যায় আনন্দের বন্যা। শিশু-কিশোরগণ আনন্দে  উদ্বেলিত হয়ে প্রজাপতির মত ডানা মেলে উড়ে বেড়ায়। এই ঈদ আল্লাহর পক্ষ থেকে  একটি বড় নে’য়ামত। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কা থেকে হিজরত করে মদীনায় আগমন করে দেখলেন, মদীনাবাসী খেলা-ধূলার মধ্য দিয়ে দুটি দিবস উদযাপন করে থাকে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এ দুটি দিবস কি? তারা বলল, এ দুটি দিবস জাহেলী যুগে আমরা খেলা-ধুলার মধ্য দিয়ে উদযাপন করতাম। তিনি বললেন, “আল্লাহ তোমাদের জন্য এর থেকে উত্তম দুটি দিবসের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন, একটি হল, ঈদুল আযহা এবং অপরটি হল, ঈদুল ফিতর।” (সুনান আবূদাঊদ, হাদীস নং ৯৫৯ সনদ-সহীহ, আলবানী) (রহঃ) ইসলামী দিক নির্দেশনা অনুযায়ী যদি আমরা  ঈদ ঊদ্যাপন করি তবে একদিকে যেমন ঈদের অনাবিল আনন্দে ভরে উঠবে আমাদের পার্থিব জীবন অন্যদিকে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে ধন্য হবে আমাদের পরকালীন জিন্দেগী।

ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর ছাড়া অন্য কোন ঈদ-উৎসব পালন করা: উপরোল্লিখিত হাদীস থেকে এ কথা স্পষ্ট যে, ইসলামী শরীয়তে ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর ব্যতিরেকে তৃতীয় কোন ঈদ বা উৎসব পালন করার সুযোগ নেই। অথচ আমাদের মুসলিম সমাজে বর্তমানে কত ধরণের ঈদ ও ঊৎসব  জমজমাট ভাবে পালন করা হচ্ছে তার কোন ইয়ত্তা নেই। যেমন, ঈদে মিলাদুন নবী বা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্ম উৎসব। বরং এটাকে ‘সকল ঈদের শ্রেষ্ঠ ঈদ’ বলে জোরেশোরে প্রচার করা হচ্ছে। যা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাদীসের  সুস্পষ্ট বিরোধী। অনুরূপভাবে তথাকথিত পহেলা বৈশাখ, খৃষ্ট নববর্ষ, এপ্রিল ফুল, বড় দিন (Xmas Day), ইত্যাদি অগণিত  উৎসব আমদের মুসলানগণ অবলিলায় পালন করে যাচ্ছে কিন্তু একবারও চিন্তা করে দেখে না যে, আসলে এগুলোর উৎস কোথায়? এসব মূলত: হিন্দু ও খৃষ্টানদের থেকে আমদানিকৃত সংষ্কৃতি যার সাথে মুসলমানের কোন সম্পর্ক থাকতে পারে না। রাসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলে গেছেন, “যে ব্যক্তি অন্য কোন জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করল সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।” (আবূদাউদ হাদীস নং ৩৫১২, সনদ-সহীহ, আলবানী) Continue reading

ছাদাক্বাতুল ফিতরের বিধান


শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু

লেখকঃ মুহাম্মাদ লিলবর আল-বারাদী

zakat-ul-fitr

আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে উদ্দেশ্যবিহীন সৃষ্টি করেননি। তিনি বলেন,

 وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلاَّ لِيَعْبُدُوْنِ

‘আমি জিন ও মানবজাতিকে কেবল আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি’ (যারিয়াত ৫১/৫৬)

ইবাদত এমন একটি ব্যাপক শব্দ যা প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে পালনকৃত এমন সব কথা ও কাজের সমষ্টি, যা আল্লাহ পসন্দ করেন ও ভালবাসেন। আল্লাহর ইবাদত গ্রহণীয় হওয়ার জন্য দু’টি শর্ত রয়েছে। এক. একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে সমস্ত ইবাদত হ’তে হবে। দুই. রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সুন্নাতী পন্থা অনুযায়ী তা পালন করতে হবে।

ইবাদত পালনে ত্রুটি-বিচ্যুতি হ’লে আল্লাহ ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ারও ব্যবস্থা রেখেছেন। ছিয়াম হ’ল মহান আল্লাহর ইবাদতের মধ্যে অন্যতম। আর এই ছিয়াম পালনে যে সকল ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়ে থাকে, তার ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য ছাদাক্বাতুল ফিতর আদায়ের বিধান রেখেছেন। এ বিধান আমাদের সুবিধার্থে পরিবর্তন ও পরিমার্জন করা সমীচীন নয়। কেননা ইসলাম হ’ল একমাত্র অভ্রান্ত, ত্রুটিমুক্ত ও পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা।

দ্বীন ইসলাম যখন পূর্ণতা পেয়েছে, তখন অপূর্ণতার সংশয় মনে ঠাঁই দেয়া নিতান্তই মূর্খতা। সুতরাং দ্বীনকে অপূর্ণাঙ্গ মনে করার অর্থই হ’ল কুরআন-হাদীছের অপূর্ণতা (নাঊযুবিল্লাহ)। আর এটা অসম্ভব, অযৌক্তিক ও ভ্রান্ত ধারণা মাত্র। পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণের প্রতি অবতীর্ণ আসমানী গ্রন্থ বিকৃত হয়েছে। কিন্তু শেষ নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর প্রতি অবতীর্ণ কুরআন অবিকৃত অবস্থায় বিদ্যমান। তবে রাসূল (ছাঃ)-এর হাদীছ বিকৃত করার অপপ্রয়াস চলেছে নানাভাবে। কিন্তু বিভিন্ন মুহাদ্দিছগণের অক্লান্ত পরিশ্রমে তা আজও অম্লান রয়েছে। তথাপিও কিছু লোক ক্বিয়াস দ্বারা ছহীহ হাদীছ বিকৃত করে চলেছে। যেমন ছাদাক্বাতুল ফিতর খাদ্যদ্রব্যের পরিবর্তে তার সমমূল্য দিয়ে আদায় করা। আলোচ্য নিবন্ধে ছাদাক্বাতুল ফিতরের বিধান সম্পর্কে আলোকপাত করা হ’ল।-

Continue reading

দুই ‘ঈদের স্বালাতে তাঁর-সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- দেখানো আদর্শ


শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালুপ্রশ্নঃ আমি দুই ‘ঈদের সালাতে নবী -সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর দেখানো আদর্শ সম্পর্কে জানতে চাই।

111

উত্তরঃ সকল প্রশংসা আল্লাহর।

তিনি -সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- দুই ‘ঈদের স্বালাত ‘ঈদগাহে (মুস্বাল্লা) আদায় করতেন। তিনি -সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ‘ঈদের স্বালাত মাসজিদে আদায় করেছেন এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না।

ইমাম আশ-শাফি‘ঈ ‘আল-উম্ম’- এ বলেছেনঃ

“আমাদের কাছে এই বর্ণনা পৌঁছেছে যে, রাসূলুল্লাহ -সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-দুই ‘ঈদের দিন মাদীনাহর ঈদগাহে যেতেন, তাঁর পরেও সবাই তাই করতেন যদি না তা না করার পেছনে কোন অজুহাত থাকত যেমন বৃষ্টি ইত্যাদি।অন্যান্য অঞ্চলের অধিবাসীরাও তাই করতেন মক্কাবাসীরা ব্যাতীত

তিনি তাঁর সবচেয়ে সুন্দর পোশাক পড়ে (দুই ‘ঈদের স্বালাত আদায় করতেন) বের হতেন। তাঁর -সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- একটি হুল্লাহ (এক বিশেষ পোশাক) পরে দুই ‘ঈদ এবং জুমু‘আহর স্বালাত আদায় করতে যেতেন। হুল্লাহ এক ধরণের দুই প্রস্থ কাপড় যা একই জাতীয় উপকরণে তৈরি।

তিনি ‘ঈদুল ফিত্বর-এর স্বালাত আদায় করতে যাওয়ার আগে খেজুর খেতেন এবং তা বিজোড় সংখ্যায় খেতেন।।

ইমাম আল- বুখারী (৯৫৩)আনাস ইবনু মালিক-রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহ- থেকে বর্ণনা করেছেন যে তিনি বলেছেনঃ

রাসূল -সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ‘ঈদুল ফিত্বর এর দিন সকালবেলা খেজুর না খেয়ে বের হতেন না, আর তিনি তা বিজোড় সংখ্যায় খেতেন।

Continue reading