ড. মুহাম্মাদ আলী
ইসলাম সকল প্রকার মাদক তথা নেশাদার দ্রব্য হারাম ঘোষণা করেছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, كُلُّ مُسْكِرٍ خَمْرٌ وَ كُلُّ خَمْرٍ حَرَامٌ ‘প্রত্যেক নেশাদার দ্রব্যই মদ আর যাবতীয় মদই হারাম’।১ অথচ এই মাদকের ভয়ংকর থাবায় আজ বিশ্বব্যাপী বিপন্ন মানব সভ্যতা। এর সর্বনাশা মরণ ছোবলে জাতি আজ অকালে ধ্বংস হয়ে যচ্ছে। ভেঙ্গে পড়ছে অসংখ্য পরিবার। বিঘ্নিত হচ্ছে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন। বৃদ্ধি পাচ্ছে চোরাচালানসহ মানবতা বিধ্বংসী অসংখ্য অপরাধ। মাদকাসক্তির কারণে সকল জনপদেই চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাস বেড়ে গিয়ে মানুষের জান-মাল ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। সমাজের অধিকাংশ অপরাধের জন্য মুখ্যভাবে দায়ী এই মাদকতা। এজন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, لاَتَشْرَبِ الْخَمْرَ، فَإِنَّهُ مِفْتَاحُ كُلِّ شَرٍّ. ‘মদ পান করো না। কেননা তা সকল অপকর্মের চাবিকাঠি’।২ অন্য হাদীছে এসেছে, اِجْتَنِبُوا الْخَمْرَ فَإِنَّهَا أُمُّ الْخَبَائِثِ. ‘তোমরা মদ থেকে বেঁচে থাক। কেননা তা অশ্লীল কাজের মূল’।৩ আলোচ্য প্রবন্ধে ইসলামের দৃষ্টিতে মাদকতা ও এর প্রতিকারের উপায় আলোচনা করা হ’ল –
আভিধানিক অর্থ : মাদকদ্রব্যের আরবী প্রতিশব্দ ‘খমর’ (خمر)। এর অর্থ- সমাচ্ছন্ন করা, ঢেকে দেয়া। এই সকল অর্থের সাথে সম্পর্কিত হওয়ার কারণেই মদ ও শরাবকে ‘খমর’ বলা হয়।
Cambridge Dictionary-তে বলা হয়েছে, An alcoholic drink which is usually made from grapes but can also be made from other fruits or flowers. It is made by FERMENTING, the fruit with water and sugar.
‘মদ হ’ল নেশাকর পানীয় যা সাধারণত আঙ্গুর থেকে তৈরী হয়। তবে অন্যান্য ফল ও ফুল থেকেও তৈরী হ’তে পারে। এটা উত্তেজনা সৃষ্টির জন্য চিনি ও পানির মাধ্যমে ফল দ্বারা তৈরী হয়’।
পারিভাষিক অর্থ : ‘যে সকল বস্ত্ত সেবনে মাদকতা সৃষ্টি হয় এবং বুদ্ধিকে আচ্ছন্ন করে ফেলে অথবা বোধশক্তির উপর ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে তাকে মাদকদ্রব্য বলে। কবি বলেন, شَرِبْتُ الْخَمْرَ حَتَّى ضَلَّ عَقْلِىْ + كَذَاكَ الْخَمْرُ تَفْعَلُ بِالْعُقُوْلِ. ‘মদ পান করে আমার বিবেক হারিয়ে গেছে। মদ এভাবেই বুদ্ধিকে নিয়ে খেল-তামাশা করে’। সাধারণত নেশা জাতীয় দ্রব্যসামগ্রী গ্রহণ করা বা পান করাই মাদকাসক্তি।
এ মর্মে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর বাণী : وَ الْخَمْرُ مَا خَامَرَ الْعَقْلَ ‘মদ বা মাদকদ্রব্য তাই, যা জ্ঞান-বুদ্ধিকে আচ্ছন্ন করে’।৪