Facebook নাকি God’s Book


 

শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু

4929114706_0002c91964

 

আমাদের অনেকেরই ফেসবুক আসক্তি রয়েছে। এক অজানা অন্ধ তাড়নায় দিনে কয়েকবারও ফেসবুকের অ্যাকাউন্ট চেক করি। কখনও কখনও ঘুমানোর আগে এটাই আমাদের শেষ কাজ হয়, আবার ঘুম থেকে উঠে প্রথম কাজ হয়। যখন আমরা এটা নিয়ে ব্যস্ত থাকি সময় দ্রুত চলে যায়, অনেকটা যেন আমরা আচ্ছন্ন থাকি এটা নিয়ে।

অথচ আমাদের কয়জনের এমন আসক্তির সম্পর্ক, অথবা আদৌ কোন সম্পর্ক আছে – কুরআনের সাথে? এটা সেই বই বা কিতাব যেটা মদ্যপ, অত্যাচারী, কন্যা শিশু জীবন্ত চাপা দিয়ে হত্যাকারী মানুষদেরকে ন্যায় এর পথে আহ্বানকারী, অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী, কোমল হৃদয়ের, সমস্ত জগতের রব আল্লাহর নিরহঙ্কারী বান্দায় পরিনত করে দিয়েছিল। এই কিতাবের মধ্যে যা রয়েছে তা যদি সেই মানুষগুলোর হৃদয়ে চিরন্তন শান্তি আর প্রবৃত্তির খেয়ালখুশির শৃঙ্খলা থেকে আত্মার মুক্তি এনে দিতে পারে, তাহলে নিঃসন্দেহে তা আমাদেরকেও আমাদের সমস্যা, হৃদয়ের যন্ত্রণা আর দুশ্চিন্তা থেকে উদ্ধার করতে পারে। কিন্তু, আমাদেরকে প্রভাবিত করার যে কি ভীষণ ক্ষমতা এর রয়েছে তা সারাজীবন আমাদের অজানাই থেকে যাবে যদি আমরা এই কিতাবকে বাদ দিয়ে অন্যান্য সম্পর্কগুলোকে কে প্রাধান্য দেওয়া অব্যহত রাখতে থাকি।

আমারা কেউ কেউ কুরআনের সাথে সম্পর্ক গড়তে চাই, কিন্তু হয়তো মনে হয়…একঘেয়ে, দুর্বোধ্য, অথাবা যথেষ্ট দ্রুত না। আমরা স্ট্যাটাস আপডেট, ছবি, আর প্রানবন্ত আলাপচারিতায় অভ্যস্ত। আমরা মজার মজার ক্যাপশন আর ছবি বেশী উপভোগ করি। আমরা সত্যিকারেরে মানুষজন, কথার আদান প্রদান, ধরা ছোঁওয়ার মধ্যের বন্ধুত্ব -অথবা অন্ততঃ শুধু ফেসবুকের বন্ধুত্ব বেশী পছন্দ করি। আমাদের মধ্যে অনেকেই বাস্তবে চেনেও না এমন মানুষকেও বন্ধু হিসেবে অ্যাড করে নেই।

আসলে আমরা যা পছন্দ করি তা অনেক আগে থেকেই কুরআনের ভিতরেই রয়েছে। এখন এটা আমাদের উপরই নির্ভর করে আমরা আল্লাহর সহায়তায় কুরআনকে আমাদের বর্তমানের বিনদোনের উপকরনের সাথে অদল বদল করতে পারি কিনা। কুরআনের ভিতর থেকেই আমরা আমাদের হৃদয়ের খোরাক পেতে পারি, যদি আমরা আমাদের চিন্তাধারাকে পরিবর্তন করি আর আমাদের কল্পনাশক্তিকে কাজে লাগাই। এখন কয়েকটি উপায়ের উল্লেখ করছি যা আমরা আল্লাহর কিতাব আল-কুরানের সাথে আমাদের সম্পর্ক উন্নয়নে বাস্তবে কাজে লাগাতে পারি আর এতে করে দুনিয়া ও আখেরাতে আমাদের অবস্থানের উন্নতির আশা করতে পারি ইনশাআল্লহ।

Continue reading

কুরআনের ছোঁয়ায় বদলে যাক এ জীবন


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

 অনুবাদক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল

লিসান্স: মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদী আরব

 জুবাইল দা’ওয়া এন্ড গাইডেন্স সেন্টার,  সৌদী আরব

ভূমিকা: আল কুরআন মহান আল্লাহর বাণীর অপূর্ব সমাহার বিস্ময়কর এক গ্রন্থের নাম। আল কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ সংরক্ষিত এক সংবিধান। এই কুরআন যেমন সমগ্র মানবজাতির মানসিক সংশয়, সন্দেহ, অস্পষ্টতা, কুপ্রবৃত্তি, লোভ-লালসা নামক নানারকম রোগ-ব্যাধি নিরাময়ের অব্যর্থ মহৌষধ ঠিক তেমনি দৈহিক রোগ-ব্যাধি, বেদনা, কষ্ট-ক্লেশ এবং জীবন চলার পথের সকল অন্ধকার বিদূরিত করার এক অনবদ্য  নির্দেশিকা। এই কুরআন হল, সত্য-মিথ্যা এবং বৈধ-অবৈধের সীমা-রেখা নির্ধারণের এক সুউচ্চ মাইল ফলক, সুখ সমৃদ্ধ জীবনের বিশ্বস্ত ঠিকানা এবং পশ্চাদপদতা, দুর্ভাগ্য ও হতাশার গ্লানি থেকে মুক্তির অনুপম গাইড লাইন।

বিশ্ববাসীর প্রতি আল কুরআনের চ্যালেঞ্জ:

আল কুরআন কিয়ামত পর্যন্ত অনাগত বিশ্বের এক চিরন্তন বিস্ময়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সমগ্র মানব ও দানব জাতির প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন-কুরআনের মত আরেকটি গ্রন্থ তারা সবাই মিলে রচনা করুক তো। কিন্তু কাল প্রবাহে সবাই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।  ইরশাদ হচ্ছে:

قُلْ لَئِنِ اجْتَمَعَت الْأِنْسُ وَالْجِنُّ عَلَى أَنْ يَأْتُوا بِمِثْلِ هَذَا الْقُرْآنِ لا يَأْتُونَ بِمِثْلِهِ وَلَوْ كَانَ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ ظَهِيراً

“বলুন, যদি মানব ও জিন সকলে কুরআনের অনুরূপ রচনা করার জন্য একত্রিত হয়, এবং তারা পরস্পরে সাহায্যকারী হয়; তবুও তারা এর অনুরূপ রচনা করতে পারবে না।” (সূরা বানী ইসরাঈলঃ ৮৮)

আবার চ্যালেঞ্জ দেয়া হয়েছে, পুরো গ্রন্থ নয়; কুরআনের মত দশটি সূরা তারা রচনা করুক তো। কিন্তু তাতেও সবাই ব্যর্থ হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে:

أَمْ يَقُولُونَ افْتَرَاهُ قُلْ فَأْتُوا بِعَشْرِ سُوَرٍ مِثْلِهِ مُفْتَرَيَاتٍ وَادْعُوا مَنِ اسْتَطَعْتُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ

“তারা কি বলে কুরআন সে (অর্থাৎ নবী মোহাম্মাদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজে তৈরি করেছে? আপনি বলে দিন, তবে তোমরাও অনুরূপ দশটি সূরা তৈরি করে নিয়ে আস। আর আল্লাহ ছাড়া যাকে পারো ডেকে নাও। যদি তোমাদের কথা সত্য হয়ে থাকে।” (সূরা হুদ: ১৩)

Continue reading

আল-কোরআনুল কারীম : মর্যাদা, শিক্ষা ও বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তা : পর্ব-১


আল-কোরআনুল কারীম : মর্যাদা, শিক্ষা ও বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তা

মানব অন্তর কালিমাযুক্ত হয়ে কঠিন হয়ে যায়। দুনিয়ার প্রাচুর্যের মোহ ও প্রবৃত্তির চাহিদা নফ্‌সকে দুর্বল ও অসাড় করে ফেলে। মানুষকে এ পৃথিবীতে নফস, প্রবৃত্তি, ও শয়তানের সাথে যুদ্ধ ও সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে হয়। একজন যোদ্ধাকে যদি অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক উভয় প্রকার অস্ত্রের মুখাপেক্ষী হতে হয় তাহলে চিরন্তন সফলতা যে যুদ্ধে বিজয় লাভের উপর নির্ভরশীল এমন যুদ্ধের যোদ্ধাকে অবশ্যই সক্রিয় ও কার্যকর অস্ত্রে সজ্জিত হতে হবে। আর তা হচ্ছে স্বীয় নফ্‌সকে সংশোধন ও পবিত্রকরণ। এ ক্ষেত্রে কোরআন ও সুন্নাহ ভিন্ন অন্য কোন পথ ও পদ্ধতি নেই। কোরআন সম্পর্কে বলতে গেলে রমজান প্রসঙ্গে দুটি কথা বলতে হয় কয়েক কারণে। যেমন :—

১. রমজান মাসেই কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে।

২. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর কোরআন অবতরণের সূচনা রমজান মাসেই হয়েছে, তখন সূরা আলাকের প্রথম কয়েকটি আয়াত নাজিল হয়।

৩. জিবরাইল আ. রমজানের প্রতি রাতে এসে রাসূলুল্লাহ সা.-কে কোরআন শিখাতেন আর তিনিও তাকে পূর্ণ কোরআন শুনিয়ে দিতেন। এ ব্যাপারটি রমজান মাসে কোরআন খতমের বৈধতাকে প্রমাণ করে। তাছাড়া কোরআন খতম সারা বছরেই গুরুত্বপূর্ণ মোস্তাহাব। তবে, রমজানে এর গুরুত্ব আরো বেড়ে যায়।

প্রথমত : কোরআনের মর্যাদা, ফজিলত ও বৈশিষ্ট্য।

কোরআনুল কারীমের মর্যাদা, ফজিলত, অবস্থান ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে পবিত্র কোরআনেই অনেক আয়াত বর্ণিত হয়েছে, যেমনি এ প্রসঙ্গে বহু হাদিস রয়েছে। কতক এখানে তুলে ধরা হল।

(১) কোরআন বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহ তাবারাকা ও তাআলার কালাম। তিনি তা স্বীয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর রূহুল আমীন জিবরাইল আ.-এর মাধ্যমে অবতীর্ণ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন :-

وَإِنْ أَحَدٌ مِنَ الْمُشْرِكِينَ اسْتَجَارَكَ فَأَجِرْهُ حَتَّى يَسْمَعَ كَلَامَ اللَّهِ (التوبة :6)

মুশরিকদের কেউ যদি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করে, আপনি তাকে আশ্রয় দিয়ে দিন, যাতে সে আল্লাহর কালাম শুনতে পায়।[সূরা আত তাওবা ৬]

Continue reading