অনৈক্য প্রবণতা: মুসলিম উম্মাহর প্রধান সংকট


লেখক : মুহাম্মদ রাবে আল-হাসানী আন-নববী
অনুবাদক : জহীর উদ্দীন বাবর
সম্পাদক : ইকবাল হোছাইন মাছুম

মুসলিম জাতির অনন্য কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। পারস্পরিক ঐক্য ও বিভক্তি এর অন্যতম। এটি শুধু আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্যের ভিত্তিতেই হয়। হাদীসে উল্লেখ আছে “এক মুসলমান অন্য মুসলমানের জন্য এক শরীর সদৃশ। যদি এর একটি অংশ আঘাতপ্রাপ্ত হয় তবে এর প্রভাবে সারা শরীর ব্যথিত ও আঘাতপ্রাপ্ত হয়” অদৃশ্য এই শক্তিই মুসলমানদের অবিস্মরণীয় বিজয়ের গোপন রহস্য। সুলতান সালাহুদ্দীন আইয়ূবী রহ. বায়তুল মুকাদ্দাস পুনর্উদ্ধারের জন্য ঐ সময় চূড়ান্ত বিজয়ের প্রস্তুতি নেন, যখন মুসলমানদের পারস্পরিক বন্ধন সুদৃঢ় হয় এবং শামের নেতৃস্থানীয়রা একই প্লাটফর্মে জড়ো হন। ইতিহাসের ঘটনাবলী বিশ্লেষণ করলে একথা স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, মুসলমানরা কোনো একটি যুদ্ধেও সফলকাম হতে পারেনি; যতক্ষণ না তাদের মধ্যে ঐক্য ও সংহতির সুদৃঢ় বন্ধন স্থাপিত হয়েছে। পারস্পরিক সহযোগিতাবোধ জেগেছে। মতবিরোধ ও ভেদাভেদ থেকে নিস্কৃতি পেয়েছে। কিন্তু যখন প্রত্যেক ব্যক্তি নিজস্ব মত-পথ ও চিন্তাধারায় খেয়ালী বিচরণ করবে; নিজেদের মধ্যে সৃষ্ট মত পার্থক্য শত্রতার রূপ নেবে; তখন সফলতার আর কোনো প্রচেষ্টাই কাজে আসবে না। সর্ব ক্ষেত্রে মুসলমানরা হবে অপদস্থ। তাদের জন্য থাকবে পরাজয়ের গ্লানি।
বর্তমান মুসলিম উম্মাহ অনৈক্য ও অসংহতির মারাত্মক ব্যাধিতে আক্রান্ত। দুনিয়াতে আজ মুসলামানদের রয়েছে বৃহৎ একটি জনগোষ্ঠী। পৃথিবীর এক চতুর্থাংশ তাদের। তবুও দুনিয়ার অন্যান্য শক্তির কাছে তারা আজ নত। লাঞ্ছিত ও নিস্পেষিত হচ্ছে দেশে দেশে। তাদের দেখে বিদ্রুপের হাসি হাসছে বাতিল শক্তি। কিন্তু মুসলমানদের এই অবস্থা হলো কেন? এর একমাত্র কারণ, মুসলিম উম্মাহর ভেতরে ঢুকে পড়েছে অনৈক্যের বীজ। মুসলিম বিশ্ব আজ শতধা বিভক্ত। তাদের খন্ড খন্ড শক্তি নির্জীব হয়ে আছে। প্রত্যেকে তাদের নিজস্ব মতের পূঁজায় লিপ্ত। নিজের গোত্র বা দলনেতার কথাই তিল-তাবিজ; অন্যের কোনো গুরুত্ব নেই। উম্মতের এই অনৈক্য ও অসংহতি সৃষ্টি করছে মারাত্মক বিষক্রিয়ার। ফলে তারা কাটাচ্ছে মুমূর্ষু অবস্থা ।
Continue reading

অশ্লীল কথা বা বাক্য উচ্চারণ ও জিহ্বার হক


জিহ্বার কার্যকারিতা – জিহ্বা মহান আল্লাহর বিচিত্র সৃষ্টি রহস্যের অন্যতম একটি। সাধারণত জিহ্বাকে আমরা এক টুকরো গোশত মনে করি, কিন্তু জিহ্বা হাড়বিহীন এক টুকরো গোশত হলেও এর রয়েছে অদম্য শক্তি। জিহ্বার শক্তি যে শুধু বর্তমানের উপর রয়েছে তা নয়, বরং জিহ্বা বর্তমান, ভবিষ্যত ও অতীতে সমানভাবে শক্তি প্রয়োগ করতে পারে। বর্তমানে যা হচ্ছে, অতীতে যা হয়ে গেছে এবং ভবিষ্যতে যা হবে, সব সমানভাবে উচ্চারণ করতে পারে জিহ্বা।

• পক্ষান্তরে, চোখ দিয়ে শুধু বর্তমান উপস্থিত বস্তু দেখা যায়।
• কান দিয়ে কেবল বর্তমানে উচ্চারিত শব্দগুলোই শোনা যায়।
• জিহ্বা বুদ্ধির প্রতিনিধিস্বরূপ আর বুদ্ধির সীমানা তো সুবৃস্তিত।

তেমনি বুদ্ধিতে যা আসে এবং চিন্তা ও কল্পনা করে বুদ্ধি যা নিশ্চিত করে, জিহ্বা তাই বর্ণনা করতে সক্ষম হয়।
জিহ্বা ছাড়া অন্য কোন ইন্দ্রিয়ের এরুপ শক্তি নেই, কেননা
আকার ও রঙ ব্যতীত অন্য কোন কিছুর উপর চোখের অধিকার নেই।
আওয়াজ ব্যতীত অন্য কিছু উপর কানের অধিকার নেই।

Continue reading

কীভাবে আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালোবাসব?


মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী

মুমিন মাত্রই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি মহব্বত পোষণ করে। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি মহব্বত রাখা ঈমানের এক অপরিহার্য অংশ। পরম শ্রদ্ধা, গভীর ভালোবাসা আর বিপুল মমতার এক চমৎকার সংমিশ্রণের সমন্বিত রূপ হচ্ছে ‘মহব্বত’ নামের এ আরবী অভিব্যক্তিটি।

ঈমানের আলোকে আলোকিত প্রত্যেক মুমিনের হৃদয় আলোড়িত হয়, শিহরিত হয়, মনে আনন্দের বীনা বাজতে থাকে যখন প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম উচ্চারিত হয়, তাঁর জীবন-চরিত আলোচিত হয় কিংবা তাঁর মুখনিঃসৃত বাণী পাঠ করা হয়। সত্যের দীক্ষায় দীক্ষিত হৃদয় তাঁর আদর্শের শ্রেষ্ঠতায় ও সৌন্দর্যে মোহিত হয়, উম্মতের প্রতি তাঁর প্রগাঢ় ভালোবাসায় আপ্লুত হয়। তাঁর একনিষ্ঠ দিক নির্দেশনায় পথ খুঁজে পায় পথহারা বিভ্রান্ত মানব সন্তানেরা, আর দুর্বল চিত্তের লোকেরা ফিরে পায় মনোবল। মানবতার কল্যাণকামীরূপেই আল্লাহ তাঁকে প্রেরণ করেছেন এ বিপর্যস্ত ধরাধামে। সত্যিই তিনি তাঁর যুগের যমীনকে মুক্ত করেছেন অশান্তির দাবানল হতে, উদ্ধার করেছেন অজ্ঞানতা ও মুর্খতার নিকষ অন্ধকার হতে। তাইতো জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই তাঁকে বরণ করে নিয়েছে মানবতার বন্ধুরূপে।

সত্যের এহেন প্রতিষ্ঠাতা, চারিত্রিক মাধূর্য ও ব্যবহারিক সৌন্দর্যের এমন রূপকারের প্রতি একটু বেশী পরিমাণে ভালোবাসা পোষণ করা এবং তাঁর প্রতি পাহাড়সম প্রগাঢ় শ্রদ্ধা রাখা মুমিন জীবনে খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। ইসলামী শরী‘আত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ভালোবাসা ও মহব্বত পোষণকে ওয়াজিব ও অপরিহার্য বলে আখ্যায়িত করেছে। আল্লাহ বলেন,

﴿قُلۡ إِن كَانَ ءَابَآؤُكُمۡ وَأَبۡنَآؤُكُمۡ وَإِخۡوَٰنُكُمۡ وَأَزۡوَٰجُكُمۡ وَعَشِيرَتُكُمۡ وَأَمۡوَٰلٌ ٱقۡتَرَفۡتُمُوهَا وَتِجَٰرَةٞ تَخۡشَوۡنَ كَسَادَهَا وَمَسَٰكِنُ تَرۡضَوۡنَهَآ أَحَبَّ إِلَيۡكُم مِّنَ ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ وَجِهَادٖ فِي سَبِيلِهِۦ فَتَرَبَّصُواْ حَتَّىٰ يَأۡتِيَ ٱللَّهُ بِأَمۡرِهِۦۗ وَٱللَّهُ لَا يَهۡدِي ٱلۡقَوۡمَ ٱلۡفَٰسِقِينَ ٢٤﴾  [التوبة: 24]

‘‘বল, তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের গোত্র তোমাদের সে সম্পদ যা তোমরা অর্জন করেছ, আর সে ব্যবসা যার মন্দ হওয়ার আশংকা তোমরা করছ, এবং সে বাসস্থান যা তোমরা পছন্দ করছ, যদি তোমাদের কাছে অধিক প্রিয় হয় আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও তার পথে জিহাদ করার চেয়ে, তবে তোমরা অপেক্ষা কর আল্লাহ তাঁর নির্দেশ নিয়ে আসা পর্যন্ত।’’ [আত-তাওবাহ: ২৪]

যাদের কাছে আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বাধিক প্রিয় নয়, তাদেরকে আল্লাহ এ আয়াতটিতে ভীষণ আযাবের হুমকি দিয়েছেন। ওয়াজিব ও অপরিহার্য কাজ বর্জন না করলে এ ধরনের হুমকি দেয়া হয় না।

Continue reading

প্রশংসনীয় বিতর্কের উনিশটি শর্ত


আমরা যখন কোন বিষয়ে বিতর্ক করতে যাব, তখন আমাদের বিতর্কে যাওয়ার পূর্বে কি কি শর্তাবলী মেনে চলা উচিত, তা অবশ্যই জানা থাকতে হবে। প্রশংসনীয় বিতর্কের শর্তাবলী নিম্নরূপ:

এক. বিতর্ক হবে একমাত্র আল্লাহর জন্য। বিতর্ক দ্বারা বরকত লাভ ও ফায়েদা হাসিলের জন্য এখলাস হল পূর্বশর্ত। কারণ, তর্কের উদ্দেশ্য হল, সত্য উদঘাটন করা এবং হককে জানা। এ কারণে এ বিষয়ে বিতর্কে যাওয়ার পূর্বে আল্লাহর ভয় অন্তরে বিদ্যমান থাকতে হবে এবং সদিচ্ছা ও সুন্দর নিয়ত থাকতে হবে। তাহলেই বিতর্ক দ্বারা অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌছা যাবে।

দুই. বিতর্ক হতে হবে উত্তম পদ্ধতিতে

তিন. বিতর্ক করতে হবে ইলমের দ্বারা। অর্থাৎ, যে বিষয়ে বিতর্ক করবে, সে বিষয়ে অবশ্যই তার জ্ঞান থাকতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, সাবধান! তোমরা তো সেসব লোক, বিতর্ক করলে এমন বিষয়ে, যার জ্ঞান তোমাদের রয়েছে। তবে কেন তোমরা বিতর্ক করছ সে বিষয়ে যার জ্ঞান তোমাদের নেই? আর আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জান না[সূরা আলে-ইমরান: ৬৬]

চার. আল্লাহ তাআলার নামের মাধ্যমে বিতর্ক শুরু করবে। সুতরাং, উভয় পক্ষ আল্লাহর নাম ও বিছমিল্লাহ দ্বারা বিতর্ক শুরু করবে। যদি মুখে উচ্চারণ করতে না পারে, তবে তাকে অবশ্যেই অন্তরে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে হবে।

Continue reading

ঝগড়া-বিবাদ মানুষের স্বভাবের সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত


ঝগড়া-বিবাদ করা মানুষের স্বভাবের সাথে জড়িত। প্রাকৃতিক ভাবে একজন মানুষ অধিক ঝগড়াটে স্বভাবের হয়ে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আর আমি এই কুরআনে মানুষের জন্য সকল প্রকার উপমা বিস্তারিত বর্ণনা করেছি। আর মানুষ সবচেয়ে বেশি তর্ককারী[সূরা কাহাফ– আয়াত: ৫৪] অর্থাৎ, সবচেয়ে অধিক ঝগড়া-কারী ও প্রতিবাদী; সে সত্যের পতি নমনীয় হয় না এবং কোন উপদেশ-কারীর উপদেশে সে কর্ণপাত করে না। [তাফসীরে কুরতুবী ২৪১/৮]

আলী ইবনে আবি তালিব রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ও তার মেয়ে ফাতেমা রা. কে তাদের উভয়ের দরজায় পাড়ি দিয়ে উভয়কে জিজ্ঞাসা করে বলেন, তোমরা উভয়ে কি সালাত আদায় করনি? আমরা তাকে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের জীবনতো আল্লাহর হাতে, তিনি ইচ্ছা করলে আমাদের জাগাতে পারতেন। আমরা এ কথা বলার সাথে সাথে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন প্রকার কালক্ষেপণ না করে ফিরে যান। আমাকে কোন প্রতি উত্তর করেননি। তারপর আমি শুনতে পারলাম তিনি যাওয়ার সময় তার রানে আঘাত করে বলছেন [সূরা কাহাফ- আয়াত: ৫৪] অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দ্রুত উত্তর দেয়া ও ব্যাপারটি নিয়ে কোন প্রকার নিজের দুর্বলতা প্রকাশ না করাতে অবাক হন। এ কারণেই তিনি স্বীয় উরুর উপর আঘাত করেন।

তবে এখানে একটি কথা অবশ্যই স্বীকার করতে হবে, তা হল মানুষ হিসেবে সবার মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ করার গুণ প্রাকৃতিক হলেও কোন কোন মানুষ এমন আছে, যার মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ করার গুণ অন্যদের তুলনায় অধিক বেশি এবং সে ঝগড়া করতে অন্যদের তুলনায় অধিক পারদর্শী। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কাফেরদের নিকট রিসালাতের দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করার পর কাফেরদের বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আর আমি তো তোমার ভাষায় কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি, যাতে তুমি এর দ্বারা মুত্তাকীদেরকে সুসংবাদ দিতে পার এবং কলহপ্রিয় কওমকে তদ্বারা সতর্ক করতে পার[সূরা মারয়াম: আয়াত: ৯৭]

Continue reading

দাড়ি কামিয়ে ফেলার ফলে সংঘটিত সাতটি গুনাহ


(১) অবাধ্যতা

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, আল্লাহ তায়ালা তাঁর রাসূল যখন কোনো ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন তখন কোনো মুমিন পুরুষ কোনো মুমিন নারীর তাদের সে ব্যাপারে নিজেদের কোনো রকম এখতিয়ার থাকবে না – (যে তারা তাতে কোনো রদবদল করবে); যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালা তাঁর রাসূলের নাফরমানী করবে, সে নিসন্দেহে সুস্পষ্ট গোমরাহীতে নিমজ্জিত হয়ে যাবে (আল-আহযাব ৩৬)

তোমাদের মধ্যে যদি কেউ আল্লাহ তায়ালা এবং তাঁর রসূলকে অমান্য করে, তার জন্যে রয়েছে জাহান্নামের আগুন, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে (সূরা জ্বিন ২৩)

রাসূল তোমাদের যা কিছু দেয় তা তোমরা গ্রহণ করো এবং সে যা কিছু নিষেধ করে তা থেকে বিরত থাকো, আল্লাহ তায়ালাকেই ভয় করো; অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা কঠোর শাস্তিদাতা (হাশর ৭)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,”আর আমি যাকিছু নিষেধ করেছি তা থেকে বেঁচে থাকো [৩]

হযরত আমর ইবন শুয়াইব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “বার্ধক্যে (সাদাচুলকে) উপড়ে ফেলো না কেননা তা কিয়ামতের দিন মুসলমানের জন্য আলোকবর্তিকা হবে (তিরমিযি, আবু দাউদ, রিয়াদুস সালেহিন ১৬৪৬)

যে আমার সুন্নাহ বিরাগভাজন হয়, তার আমার সাথে কোন লেনদেন নেই (বুখারী, ৪৬৭৫)

দাড়ি কিংবা মাথা থেকে চুল উপড়ে ফেলার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। প্রকৃতপক্ষে, যে তার দাড়ি কামিয়ে ফেলে সে কালো কিংবা সাদা উভয় প্রকার চুলের বৃদ্ধিকেই অপছন্দ করে থাকে,অথচ সাদা দাড়িকে কিয়ামতের দিন মুসলমানের জন্য নূর হিসেবে বলা হয়েছে। ইমাম গাযযালী এবং ইমাম নওয়াবী (রাহিমাহুল্লাহ) উভয়ে বলেছেন, “যখন দাড়ি গজাতে শুরু করে তখন তা উপড়ে ফেলা হল মুরদ’দের [৪] সাথে সাদৃশ্য এবং একটি বড় মুনকারাত(মন্দ কাজ)”

Continue reading

শয়তানের প্রবেশপথ – (২/৪ পর্ব)


সময় ক্ষেপণ ও মিথ্যা আশ্বাস প্রদান

শয়তান মানুষকে এমনভাবে আশ্বস্ত করে যে, তার জীবন অনেক দীর্ঘ এবং তার কাছে সৎকর্ম ও তওবা করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। তাই সে যখন নামাজ পড়ার ইচ্ছা পোষণ করে শয়তান তাকে বলে, তুমি তো এখনও সেই ছোট রয়ে গেছ, যখন বড় হবে নামাজ পড়বে। এবং যখন আত্মশুদ্ধিকারী ব্যক্তি আত্মশুদ্ধি করতে চায় শয়তান তাকে বলে এটাতো তোমার প্রথম মওসুম : আগামী বৎসরের জন্যে তুমি অপেক্ষা কর। আর যখন কোন মানুষ কোরআন পড়তে চায় শয়তান তাকে বলে তুমি সন্ধ্যায় পড়বে। এবং সন্ধ্যা হলে বলে তুমি আগামীকাল পড়বে। এবং আগামীকাল বলে তুমি পরশু পড়বে, এভাবে মৃত্যু পর্যন্ত অপরাধকারী তার পাপের ওপর অবশিষ্ট থাকবে। আর এই প্রক্রিয়ায় শয়তান কিছু কাফেরকে ইসলাম থেকে নিবৃত্ত করে রাখে। আল্লাহ তাআলা বলেছেন—

যাদের কাছে হেদায়াতের পথ পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার পরও তারা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, শয়তান এদের মন্দ কাজগুলো (ভালো লেবাস দিয়ে) শোভনীয় করে পেশ করে এবং তাদের জন্যে নানা মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে রাখে[১]

তাই বলা হয়, এর অর্থ হচ্ছে শয়তান তাদের উদ্দেশ্যে আশাকে সম্প্রসারিত করেছে এবং তাদেরকে দীর্ঘায়ুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এছাড়া ভিন্ন অর্থের মতও রয়েছে। কতক ঊলামায়ে কেরাম বলেছেন—

আমি তোমাদেরকে ‘সাওফা’ তথা ‘এই করছি’, ‘এখনও সময় আছে’, ‘ভবিষ্যতে করব’, ‘কিছুটা ঝামেলা মুক্ত হয়েই করা শুরু করব।’ এমন সব ভবিষ্যৎ অর্থবোধক শব্দ হতে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছি।[২]

Continue reading

শয়তানের প্রবেশপথ পর্ব-১


লেখক : নুমান বিন আবুল বাশার

সম্পাদনা : কাউছার বিন খালেদ

আল্লাহ তাআলা যখন তার নবী আদম আ.-কে সৃষ্টি করেছেন, তিনি আদমকে সেজদা করতে ফেরেশতাদের হুকুম করেন। অত:পর সব ফেরেশতা সেজদায় অবনমিত হল একমাত্র ইবলিস ছাড়া, সে ছিল জিনদের অন্তর্ভুক্ত। সে তার প্রভুর নির্দেশ অমান্য করল, এবং অস্বীকার ও অহংকার প্রদর্শন করল। এবং সে ছিল কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন—

আল্লাহ তাআলা বললেন, হে ইবলিস, তোমাকে কোন্ জিনিস তাকে সেজদা করা থেকে বিরত রাখল যাকে আমি স্বয়ং নিজের হাত দিয়ে বানিয়েছি, তুমি কি ঔদ্ধত্য প্রকাশ করলে, না তুমি কোনো উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন কেউ? ‘সে বলল (হ্যাঁ), আমি তো তার চাইতে শ্রেষ্ঠ, তুমি আমাকে আগুন থেকে বানিয়েছ আর তাকে বানিয়েছ মাটি থেকেতখন আল্লাহ তাআলা বললেন, তুমি এখান থেকে এখনই বের হয়ে যাও, কেননা তুমি হচ্ছ অভিশপ্ততোমার ওপর আমার অভিশাপ থাকবে শেষ বিচারের দিন পর্যন্তসে বলল, (হ্যাঁ) আমি বেরিয়ে যাচ্ছি, তবে হে আমার মালিক ! তুমি আমাকে সে দিন পর্যন্ত অবকাশ দাও যে দিন সব মানুষকে (দ্বিতীয়বার) জীবিত করে তোলা হবেআল্লাহ তাআলা বললেন, (হ্যাঁ, যাও) যাদের অবকাশ দেয়া হয়েছে তুমিও তাদের অন্তর্ভুক্তঅবধারিত সময়টি আসার সে নির্দিষ্ট দিন পর্যন্ত (তুমি থাকবে) সে বলল (হ্যাঁ) তোমার ক্ষমতার কসম (করে আমি বলছি) আমি তাদের সবাইকে বিপদগামী করে ছাড়বতবে তাদের মধ্যে যারা তোমার একনিষ্ঠ বান্দা তাদের ছাড়াআল্লাহ তাআলা বললেন, (এ হচ্ছে) চূড়ান্ত সত্য, আর আমি এ সত্য কথাটাই বলছি—‘তোমার ও তোমার অনুসারীদের সবাইকে দিয়ে আমি জাহান্নাম পূর্ণ করবই[সোয়াদ-৭৫-৮৫]

Continue reading