লেখক : রাশেদ বিন আব্দুর রহমান আয-যাহরানী
অনুবাদ: সানাউল্লাহ নজির আহমদ
ইসলাম প্রচার বু্যরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :”কেয়ামতের দিন মৃতু্যকে কালো মেষ আকৃতিতে জান্নাত-জাহান্নামের মাঝখানে হাজির করা হবে। অতঃপর বলা হবে, হে জান্নাতবাসী, তোমরা একে চিন? তারা উঁকি দিয়ে তাকাবে এবং বলবে, হঁ্যা, এ হলো মৃতু্য। এরপর তাকে জবাই করার নির্দেশ দেওয়া হবে। অতঃপর বলা হবে, হে জান্নাতবাসীগন, তোমরা চিরস্থায়ী, আর মুতু্য নেই। হে জাহান্নাম বাসীগণ, তোমরা চিরস্থায়ী, আর মৃতু্য নেই। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তেলাওয়াত করলেন : “তাদেরকে সতর্ক করে দাও পরিতাপের দিবস সম্বন্ধে, যখন সকল সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে; তারা অসাবধানতায় আছে, তারা ইমান আনছে না।” এ হলো জাহান্নাম ও জাহান্নামিদের অবস্থা।
আহ! সর্বনাশ সে ব্যক্তির, যে আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে শরীক করে : যাদুকরের নিকট যায়, যাদু বিশ্বাস করে ও মৃত ব্যক্তির নিকট পর্্রাথনা করে। এরশাদ হচ্ছে:
“নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরিক করে, আল্লাহ তার ওপর জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন, তার ঠিকানা নরকাগি্ন।” অন্যত্র এরশাদ হচ্ছে:
“আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য স্থির কর না, তাহলে দোষী সাব্যস্ত ও বিতাড়িত হয়ে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।”
ধ্বংস সে ব্যক্তির জন্য, যে নামাজ পড়ে না। তারা কি জান্নাতিদের প্রশ্ন শ্রবন করেনি? যা জাহান্নামিদের লক্ষ্য করে করা হবে। এরশাদ হচ্ছে :
“তোমাদেরকে জাহান্নামে কে হাজির করেছে? তারা বলবে আমরা নামাজ পড়তাম না।” ফজরের আজান হয়, মুসলমানগণ মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে শ্রবন করে, “এশো নামাজের দিকে, এসো কল্যাণের দিকে” তার পরেও তারা ঘুম থেকে উঠে না, জামাতে শরিক হয় না, নামাজও পড়ে না! এভাবেই তারা আল্লাহ অবাধ্যতার মাধ্যমে দিনের শুরুটা আরম্ভ করে।
ধ্বংস তাদের জন্য যারা যাকাত আদায় করে না। এরশাদ হচ্ছে :
“আর যারা স্বর্ণ ও রূপা জমা করে রাখে এবং তা ব্যয় করে না, তাদের কঠোর আযাবের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন। সে দিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তা দিয়ে তাদের ললাট-পাশর্্ব-পৃষ্ঠ দগ্ধকরা হবে। (সে দিন বলা হবে) এটাই, যা তোমরা জমা করে ছিলে নিজেদের জন্য। সুতরাং যা তোমরা জমা করতে এখন তা-ই আস্বাদান কর।” ধ্বংস তাদের জন্য, যারা লোক দেখানোর নিয়তে জেহাদ করে, ইলম শিক্ষা দেয়, দাওয়াত ও তাবলিগের কাজ করে এবং সাদকার ন্যায় নেক আমলসমূহ সম্পাদন করে। কিয়ামতের দিন চুরান্ত ফয়সালা শেষে তাদেরকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। ধ্বংস তাদের জন্য, যারা অন্যায়ভাবে কোন মুসলমান হত্যা করে। এরশাদ হচ্ছে :
“যে ব্যক্তি সেচ্ছায় কোন মুসলমান হত্যা করে, তার শাস্তি জাহান্নাম, তাতেই সে চির কাল থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন, তাকে অভিসম্পাদ করেছেন এবং তার জন্য ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন।” ধ্বংস তাদের জন্য, যারা সুদ খোর, ঘুষ খোর। কারণ, হারাম দ্বারা তৈরি গোস্তের স্থান জাহান্নাম। এরশাদ হচ্ছে :
“যারা সুদ খায়, তারা ঐ ব্যক্তির ন্যায় ব্যতীত দাঁড়াতে পারবে না, যাকে শয়তান আসর করে মোহাবিষ্ট করে দিয়েছে। এটা এ জন্য যে, তারা বলেছে বিকিকিনি তো সুদের মতই। অথচ আল্লাহ বিকিকিনি হালাল করেছেন আর সূদকে হারাম করেছেন। অতএব যার নিকট তার রবের পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে এবং সে বিরত থেকেছে, তার বিষয়টি আল্লাহর ওপর ন্যাস্ত। আর যারা পুনরায় সূদের কারবার করবে, তারাই দোযখবাসী, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।” রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
“ধ্বংস তার জন্য যে খেয়ানত করেছে এবং জনসাধারনের সম্পদ আত্মসাৎ করেছে।”
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
“ধ্বংস তার জন্য, যে কোন মুসলামনের হক মিথ্যা কসম দ্বারা নিয়ে নিল। যদিও তা আরাক গাছের ছোট ডাল তুল্য হয়, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জাহান্নাম প্রজ্জলিত করে রেখেছেন। ধ্বংস তার জন্য, যে ইয়াতিমের ওপর জুলুম করে, তাকে সুষ্ঠু শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করে এবং তার সম্পদ ভক্ষণ করে। এরশাদ হচ্ছে :
“যারা ইয়াতীমের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করে, তারা নিজদের পেটে আগুন ভর্তি করে, এবং তারা সত্তরই অগি্নতে প্রবেশ করবে।” ধ্বংস তাদের জন্য, যারা দাম্ভিক, অহংকারী। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
“আমি কি তোমাদের জাহান্নামীদের ব্যাপারে বলে দিব!? : প্রত্যেক বদমেজাজ, কৃপন, অহংকারী।” রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
“পরিধেয় কাপড় যতটুকু টাখনুর নিচে যাবে, টাখনুর ততটুকু স্থান জাহান্নামে থাকবে।”
ধ্বংস তার জন্য, যে মাতা-পিতার অবাধ্য, আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
- “আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী জান্নাতে যাবে না।” ধ্বংস তার জন্য, যে পরনিন্দা, দোষ চচর্া, মিথ্যাচার ও মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান করে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
- “মুখের পদস্খলন আর বিচু্যতি-ই, মানুষকে উপুর হয়ে জাহান্নামে যেতে বাধ্য করবে।” ধ্বংস তার জন্য, যে মাদকদ্রব্য সেবন করে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
- “আল্লাহর প্রতিজ্ঞা, যে নেশাদ্রব্য সেবন করবে, তাকে তিনি ‘তীনাতে খাবাল’ পান করাবেন। সাহাবীরা জিজ্ঞাসা করলো ‘তীনাতে খাবাল’ কি? তিনি বললেন : জাহান্নামীদের নিযর্াস-ঘাম।”ধ্বংস তার জন্য, যে নিষিদ্ধ বস্তু থেকে দৃষ্টি সংযত করে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
- “চোখও যেনা করে, তার যেনা হল দৃষ্টি।” ধ্বংস সে নারীদের জন্য, যারা বস্ত্র পরিধান করেও বিবস্ত্র থাকে, অপরের প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং অপরকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করে।
- “তারা জাহান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং তার ঘ্রাণও পাবে না।”হে বনি আদম! তোমার সামনে জাহান্নামের বর্ণনা তুলে ধরা হল, যা তুমি প্রতি বৎসর গ্রীষ্ম-শীতের নিঃশ্বাসের মাধ্যমে উপলব্দিও কর। আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর, আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর। আল্লাহর শপথ! এ দুনিয়ার পর জান্নাত-জাহান্নাম ভিন্ন অন্য কোন স্থান নেই। এরশাদ হচ্ছে :
- “অতএব তোমরা আল্লাহর দিকে দেঁৗড়ে যাও। আমি তার তরফ থেকে তোমাদের জন্য স্পষ্ট সতর্ককারী।” অন্যত্র এরশাদ হচ্ছে :
“মুমিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং স্বীয় পরিবার-পরিজনকে সে অগি্ন থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ আর পাথর। যাতে নিয়োজিত আছে পাষান হৃদয়, কঠোর স্বভাবের ফেরেশতাগণ, তারা আল্লাহর নির্দেশের ব্যতিক্রম করে না, এবং তা-ই সম্পাদন করে, যা তাদের আদেশ করা হয়।”
হাসান বসরী রহ. বলেন :“যে ব্যক্তি জান্নাতের আশা করে না, সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না এবং যে ব্যক্তি জাহান্নাম ভয় করে না, সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে না।” অন্তরের ভেতর সত্যিকার ভয় থাকলে, অঙ্গ-প্রতঙ্গ থেকে খালেস আমল বেড়িয়ে আসে।
যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :“যার ভেতর ভয় ছিল সে প্রতু্যশে রওনা করেছে। আর যে প্রতু্যশে রওনা করেছে, সে অভিষ্ট লক্ষ্যেও পৌঁছেছে।” মুনাফিকদের স্বভাব হচ্ছে জাহান্নাম পশ্চাতে থাকলেও বিশ্বাস না করা, যতক্ষণ-না তার গহবরে তারা পতিত হয়। মূলত জাহান্নামের বর্ণনা নেককার লোকদের ঘুম হারাম করে দিয়েছে। বিস্বাদ করে দিয়েছে তাদের খাবার-দাবার।
রাসূল বলেছেন : “আল্লাহর শপথ! আমি যা জানি যদি তোমরা তা জানতে, কম হাসতে বেশী কদঁতে। বিছানায় স্ত্রীদের সম্ভোগ করার বোধ হারিয়ে ফেলতে। আল্লাহর সন্ধানে পাঁহাড়ে এবং উঁচুস্থানসমূহে বের হয়ে যেতে।” সুবহানাল্লাহ! আখেরাত বিষয়ে মানুষ কত উদাসীন! তার আলোচনা থেকে মানুষ কত গাফেল! এরশাদ হচ্ছে :“মানুষের হিসাব-নিকাস অতি নিকটবতর্ী, অথচ তারা বে-খবর, পশ্চাদমুখি। তাদের নিকট রবের পক্ষ থেকে যখন কোন উপদেশ আসে, তারা তা খেলার ছলে শ্রবন করে। তাদের অন্তরসমূহ তামাশায় মত্ত।” হে বনি আদম! হিসাব অতি নিকটে, তবে কেন এ উদাসীনতা!? কেন হৃদয় কম্পিত হয় না!? অন্তরের মরিচিকা সবচেয়ে বিপদজনক, তার মহর মারাত্বক কঠিন। এখনো কি কর্ণপাত করার সময় হয়নি!? চোখে দেখার সময় হয়নি!? অন্তরসমূহের ভীত হওয়ার সময় হয়নি? অঙ্গ-প্রতঙ্গের সংযত হওয়ার সময় হয়নি!?
“যারা ইমান এনেছে, তাদের অন্তর আল্লাহর স্মরণ এবং যে সত্য অবতীর্ণ হয়েছে, তার কারণে বিগলিত হওয়ার সময় এখনো আসেনি? ভুলে গেলে বিপদ ঘটবে, আমাদের প্রত্যেককে জাহান্নামের ওপর দিয়ে যেতে হবে। তবে সে-ই ভাগ্যবান যে এর থেকে মুক্তি পাবে। এরশাদ হচ্ছে :
“তেমাদের প্রত্যেকে-ই তথায় পৌছঁবে। এটা তোমার রবের চুরান্তফয়সালা। অতঃপর আমি মুত্তাকিদের নাজাত দেব এবং অত্যাচারীদের নতজানু হালতে সেখানে ছেড়ে দিব।”
হে বনি আদম! আর কতকাল গাফেল থাকবে!? আর কতদিন দুনিয়া সঞ্চয় করতে থাকবে!? আর কতদিন তার জন্য গর্ব করবে!? আল্লাহ তাআলা বলেন :
“পরস্পর ধন-সম্পদের অহংকার তোমাদেরকে মোহাচ্ছন্ন করে রাখে। যতক্ষণ না তোমরা কবরসমূহে উপস্থিত হচ্ছ। এটা কখনো ঠিক নয়, শীঘ্রই তোমরা এটা জানতে পারবে। অতঃপর এটা কখনো ঠিক নয়, শীঘ্রই তোমরা জানতে পারবে। অতঃপর এটা কখনো ঠিন নয়, শীঘ্রই তোমরা এটা জানতে পারবে। সাবধান! যদি তোমরা নিশ্চিত জ্ঞান দ্বারা অবহিত হতে (তবে এমন কাজ করতে না)। তোমরা অবশ্যই জাহান্নাম দেখবে। অতঃপর তোমরা তা দিব্য-প্রতয়ে দেখবে। এর পর অবশ্যই সে দিন তোমরা নেয়ামত ম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।”
সুভসংবাদ তাদের জন্য, যারা জাহান্নামকে ভয় করে এবং যে কাজ করলে জাহান্নামে যেতে হবে, তা থেকে বিরত থাকে। এরশাদ হচ্ছে :
“যে ব্যক্তি তার রবের সামনে উপস্থিত হওয়াকে ভয় করে, তার জন্য রয়েছে দুটি জান্নাত।” আল্লাহ তাআলা বলেন :
“যাদেরকে তারা আহবান করে, তারা নিজেরাই তো তাদের রবের নৈকট্য লাভের জন্য উপায় সন্ধান করে যে, তাদের মধ্যে কে কত নিকট হতে পারে। তারা তার রহমত আশা করে এবং তার শাস্তিকে ভয় করে। নিশ্চয় তোমার রবের শাস্তি ভয়াবহ।” হে আল্লাহ! আমাদের সকলকে মুত্তাকি বানিয়ে দাও এবং তোমার রহমতের ছায়াতলে আশ্রয় দান কর। হে আল্লাহ! আমাদের জাহান্নামের অতল গহবরে ছেড়ে দিও না, আমাদের ঘার ধরে পাঁকড়াও করো না। হে আল্লাহ! আমাদের তওবা কবুল করুন এবং আমাদের সুন্দর সমাপ্তি প্রদান করুন। এরশাদ হচ্ছে :
“হে আমাদের রব! আমাদের থেকে জাহান্নামের শাস্তি হটাও। নিশ্চয় এর শাস্তি তো অাঁকড়ে থাকার জিনিস। এটা খুব খারাপ স্থান ও থাকার জায়গা।”
“হে আমাদের রব! তুমি যাকে দোযখে নিক্ষেপ করবে, তার নিশ্চিত অপমান হবে। জালেমাদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই।”
********************